গাজায় অব্যাহত বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এতে একের পর এক ধসে পড়ছে ফিলিস্তিনিদের বসতবাড়ি। বাড়ছে মানবিক সংকট। প্রায় তিন মাস ধরে গাজায় এ হামলা চলমান রয়েছে।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, প্রায় তিন মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের হামলার ফলে সেখানকার ৭০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি অফিস। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলমান এ হামলায় গাজার ২০০-এর বেশি ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলে এ হামলাকে গাজার আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ হিসেবে উল্লেখ করেছে মিডিয়া অফিস।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার তিন লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ উপত্যাকায় মোট চার লাখ ৩৯ হাজার বাড়িঘর রয়েছে।
ইসরায়েল হামাস যুদ্ধের পরে কী হবে?
স্যাটেলাইট তথ্য পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ২৯ হাজার বোমা ফেলেছে। এসব বোমা হামলায় আবাসিক এলাকা, বাইজেন্টাইন চার্চ, হাসপাতাল, শপিংমলসহ বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করা হয়েছে। হামলার কারণে এসব বাড়িঘর এমনভাবে ধ্বংস হয়েছে যে এগুলো আর মেরামতের উপযোগী নেই।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রবার্ট পাপ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানান, গাজা শব্দটিকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার এ বোমা হামলা চালানো হয়েছে। জার্মানির ড্রিশদেনসহ অন্যান্য বিখ্যাত শহরেও এভাবে বোমা হামলা করা হয়েছিল।
হামাসের হামলার জবাবে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে ২১ হাজার ৬৭২ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৬ হাজার ১৬৫ জন ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় নিখোঁজ হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় হামলা চালায়। ফলে ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে অধিকাংশ ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে দক্ষিণ গাজাও নিরাপদ নয় বলেই জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, শহরটিতে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসেছে হামাস।
রাফাহ শহর থেকে ইউএনআরডব্লিউএর গাজা শাখার পরিচালক টম হোয়াইট বিবিসিকে বলেছেন, ১০ লাখের বেশি মানুষ রাফাহ শহরে নিরাপত্তার প্রার্থনা করেছেন। এখানে কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। সব জায়গায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউএনআরডব্লিউএ-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজাজুড়ে ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খান ইউনিস ও অন্যান্য এলাকায় ইসরায়েলি হামলা জোরদার হওয়ায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি রাফাহ শহরে প্রবেশ করছে।