সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হলেও গত রাতের বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে। এতে নগরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালেও পানি ঢুকেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, রবিবার দিনগত রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মাত্র ১২ ঘণ্টায় ২০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি কামলেও সিলেট পয়েন্টে পানি বাড়ছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ১২ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৫ সেন্টিমিটার।
এদিকে, রাত ১২টার পর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে সিলেট নগরে পানি বাড়তে শুরু করে। নগরের উপকন্ঠের  বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে উপশহরের সি ও ডি ব্লকের কয়েকটি সড়কে পানি ছিল। গতকাল কিছুটা কমলেও রাতে উপশহরের সবগুলো ব্লকে এমনকি মূল সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। অনেকে বাসাবাড়ি ছেড়ে রাতেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকেছে।
কেবল উপশহর নয় নগরের জিন্দাবাজার, কানিশাইল, তেররতন, জামতলা, সোবহানীঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।
বৃষ্টির পানিতে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের আঙিনায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উজানের ঢলে সৃষ্ট সিলেট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনও সুরমা-কুশিয়ারা পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে, সিলেট পয়েন্টে এই ১২ ঘণ্টায় পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পািন অমলীশদ পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অমলশীদ পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েছে ৭ সেন্টিমিটার।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটে বন্যার্ত মানুষের জন্য চারশ টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ ৫০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ২৫০ বস্তা শুকনো খাবার, ৯ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নের ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। জেলার ৮টি উপজেলার মোট ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নামা ঢলে প্রথমে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশকিছু এলাকায় প্লাবিত হয়। পানির তোড়ে গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবিরা কাজ করেন। বিজিবিও তাদের সহায়তা করে।
এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *