মুসলিম নামাজ ও রোজা পালন করে না যে মুসলিম গোষ্ঠী!

ডেস্ক রিপোর্ট: নামাজ (প্রার্থনা) দিনে পাঁচবার আদায় করা এবং পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের মূল বিশ্বাসের অংশ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে এই দুটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনো মুসলিম যদি এগুলো পালন না করেন, তাহলে তাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্ণ মুসলমান হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
তবে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখা-উপশাখা রয়েছে। সেনেগালের বায়ে ফল মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের শেখ ইবরাহিমা ফলের অনুসারী মনে করেন। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, শারীরিক পরিশ্রম, সেবা, সৎকর্ম এবং একজন সুফি মাস্টারের প্রতি নিবেদন (শায়খ) নামাজ বা রোজার মতো ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিধানের সমতুল্য।
এর মধ্যে একটি হলো বায়ে ফল সম্প্রদায়, যারা ঐতিহ্যবাহী নামাজ বা রোজা পালন করেন না। তবুও, তারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করেন এবং তাদের মতে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো পরিশ্রম ও সৎকর্ম।
বায়ে ফল মুসলিম কারা?
বায়ে ফল সম্প্রদায়ের উৎপত্তি সেনেগালের সুফি সাধক আহমদু বাম্বা মবাকের শিক্ষার মধ্য দিয়ে। তিনি ১৮৫৩-১৯২৭ সাল পর্যন্ত ফ্রেঞ্চ শাসিত সেনেগালে বসবাস করতেন এবং মুরিদিয়া আন্দোলনের (মুরিদ ব্রাদারহুড) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শেখ আহমদু বাম্বা ফ্রেঞ্চ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস সংগ্রাম করেন। পাশাপাশি ধ্যান, আচার-অনুষ্ঠান, পরিশ্রম ও কুরআন অধ্যয়ন নিয়ে কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার একজন শিষ্য, শেখ ইবরাহিমা ফল (১৮৫৫-১৯৩০), মুরিদ ব্রাদারহুডকে বায়ে ফল আন্দোলনে রূপান্তরিত করেন এবং এই সম্প্রদায়ের মূল নীতিমালা স্থাপন করেন।
শেখ ফল কাজকে আল্লাহর ইবাদতের একটি রূপ বলে মনে করতেন। তিনি শায়খ এবং শিষ্যের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা ব্যাখ্যা করেন। তার ধারণা অনুযায়ী, এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবাদের উদাহরণ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং কুরআনের সূরা আল-হুজরাতের উল্লেখিত নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তার শিক্ষাই বায়ে ফল সম্প্রদায়ের বিকাশ ঘটায়, যেখানে নামাজ ও রোজার পরিবর্তে কঠোর পরিশ্রম ও শায়খের প্রতি নিবেদনকে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।
বায়ে ফল সম্প্রদায় শুধু তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসেই নয়, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদেও বিশেষভাবে পরিচিত।
তারা রঙিন, ছেঁড়া কাপড় পরে এবং ড্রেডলকস চুল রাখে, যাকে তারা এনডিয়াঙ্গে বা “শক্তিশালী চুল” বলে। এই চুল হাতে তৈরি পুঁতি, তার বা সুতা দিয়ে সাজানো হয়। নারীরা সাধারণত পুরো শরীর ও মাথা ঢেকে রাখে এবং গৃহস্থালি বা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি অলংকার পরে। পুরুষরা প্রায়ই লাঠি বহন করে এবং গ্র্যান্ড মাগাল নামক বাৎসরিক তীর্থযাত্রায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
সুফি ধর্মবিশ্বাসের সাথে যুক্ত থাকার কারণে বায়ে ফল সম্প্রদায়ের পুরুষরা প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও পরিচিত। তাদের মতে, সঙ্গীত আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম।
সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *