ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫ সাপ্তাহিক জনতার কণ্ঠ
বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করার জন্য কাজ করতে হবে॥ পরিকল্পনা উপদেষ্টা
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, লোকসান কমাতে বিমানকে দুইভাগ করে একভাগ বিদেশী সংস্থাকে দিয়ে পরিচালনা করা হবে এবং অন্যভাগ বিমানের মাধ্যমে পরিচালনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে। সমান সুযোগ সুবিধা পাবে দুই সংস্থাই। এরপর দেখব কোন সংস্থা ভালো করেছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমান পুনর্গঠন নিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একটি নতুন এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবে। নতুন এই এয়ারলাইনটির সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’। এটির পরিচালনা করা হবে একটি স্বাধীন, বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এটি বিমানের বিদ্যমান সম্পদের একটি অংশ ব্যবহার করবে এবং উভয় সংস্থা আলাদা বাজার ও রুট টার্গেট করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটি বাজার থেকে অপসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
এ ছাড়া, ঢাকা শহরতলীতে একটি ‘গ্লোবাল এক্সিলেন্স সেন্টার’ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (এসটিইএম) বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য কাজ করবে। পাশাপাশি পরিবেশবিজ্ঞান, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জৈবপ্রযুক্তি বিষয়েও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে। ভারতের আইআইটি-সহ আন্তর্জাতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে এটি গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে।
সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (সিএসবিসিসি অ্যান্ড আর) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য গবেষণায় মনোযোগ দেবে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের গবেষণা, শিক্ষা এবং পরিবহন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমরা একনেকে যেসব প্রকল্প পাস করি। এখন থেকে জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিটি সভাতেই প্রকল্প রাখা হচ্ছে। এতদিন বলা হতো বাপেক্সের সক্ষমতা নেই। আমরা এটার সক্ষমতা বাড়াব। প্রয়োজনে মালয়েশিয়ার মতো অন্য দেশের সংস্থার সহায়তা নেব, তবে আমদানিতে না গিয়ে বাপেক্সে সক্ষম করব।
পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংক আইনকে দুর্বল করা হয়েছে ॥ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। সামগ্রিকভাবে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই ব্যাংক খাতের এই অবস্থা। তাই ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে আমরা ৪টি বড় আকারের সুপারিশ করেছি। এসব সুপারিশ হলো প্রাতিষ্ঠানিক, নিয়ন্ত্রণমূলক, আইনি এবং তথ্যউপাত্ত বিষয়ক। এই চারটি বিষয়কে মূল ধরে আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ দিয়েছি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনকে বছরের পর বছর ক্রমান্বয়ে দুর্বল করা হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সুশাসনের জায়গাগুলো শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের যেমন প্রশাসনিক এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়োগের বিষয়টিকেও উন্নত করতে হবে।
মধ্যবর্তী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের ইন্টারনাল অডিট এবং কমপ্লায়েন্স শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর স্বায়ত্তশাসনকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের চেয়ারে যারা বসেছিলেন তাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতায় এমনটা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।