৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৪ আগস্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ)। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
প্রশ্ন: সুদের হার বাড়ানোর পরও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি মূল্যস্ফীতি। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
উত্তর: গভর্নর হিসেবে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা দিয়েছি। বিভিন্ন কৌশল নিয়েছি। মূল্যস্ফীতির দুটি দিক আছে, একটি চাহিদাজনিত, অন্যটি সরবরাহজনিত। চাহিদার দিক থেকে মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। নীতি সুদহার সাড়ে ৮ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংকঋণের সুদের হার আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আর বাড়েনি। তবে এটা ঠিক, আমাদের মূল্যস্ফীতির হার নীতি সুদহারের চেয়েও বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ ও উন্নত দেশগুলোতে কিন্তু তা নয়। এমনকি ভারতেও মূল্যস্ফীতির চেয়ে নীতি সুদহার বেশি। ভারতে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের মতো, যা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে একটু বেশি।
উত্তর: এই মুহূর্তে এটুকু বলতে পারি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কাজ করছে। রোজার পণ্যের ব্যাপক আমদানি হয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসী যে মূল্যস্ফীতি কমবেই। এ হার ৭ শতাংশের নিচে নেমে এলে ধীরে ধীরে নীতি সুদহারও কমিয়ে আনব। ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদ ইতিমধ্যে দেড় শতাংশ কমে গেছে। আমাদের বুঝতে হবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য মুদ্রার অবমূল্যায়নও দায়ী। ভালো খবর হচ্ছে, চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব—দুটিই এখন উদ্বৃত্ত। লেনদেনের ভারসাম্যও শক্তিশালী। পবিত্র হজের সময় ডলার সরবরাহের একটা চাপ ছিল, তারও সব পাওনা পরিশোধ হয়ে গেছে। রিজার্ভ ভালো, প্রবাসী আয়ও (রেমিট্যান্স) ভালো। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যদি এখন কিছু না-ও দেয়, তাতেও কিছু যায় আসে না।
প্রশ্ন: কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকিরও তো গুরুত্ব আছে।
উত্তর: বাজার তদারকিতে আমি বিশ্বাস করি না। এখানে ভর্তুকি আছে। নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রায় তুলে দেওয়া হয়েছে। লক্ষ রাখতে হবে পথেঘাটে যেন চাঁদাবাজি না হয়। একটা সমীক্ষায় এসেছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা খুব বেশি লাভ করে না। পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। এ কারণে মনে করি না যে চালের বাজারে কেউ চালবাজি করতে পারবে।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ব্যাংক খাতের ক্ষত কতটা গভীর ছিল?
উত্তর: কী বলব। এস আলম গ্রুপ ব্যাংক খাত থেকে সোয়া লাখ কোটি টাকার মতো নিয়ে গেছে। বেক্সিমকোসহ অন্য গ্রুপগুলোও ঋণের নামে বড় আকারের টাকা নিয়েছে। আমি বলব, সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এ টাকা রাজনৈতিকভাবে দেওয়া ঋণ। খেলাপি ঋণের কথা যদি বলি, এ হার এখন ১৮ শতাংশ হচ্ছে, যা পরে ৩৫ শতাংশে যাবে। এভাবে লুটতরাজের জন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদেরও দায় আছে। দায় আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও। অনেকেই বলেন যে অন্যায় চাপ যখন আসে, তখন ব্যাংক কর্মকর্তারা তা মেনে নেন কেন। চাকরি ছেড়ে দিলেই পারেন। আসলে সবার তো আর চাকরি ছাড়ার সামর্থ্য থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা তখন সমঝোতা করেন।
প্রশ্ন: দেশের ১০ বড় শিল্প গ্রুপ নিয়ে তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা কী?
উত্তর: যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)—সবাই মিলে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২টি কক্ষ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে কাজ করার সুবিধার্থে। আমাদের চিন্তা হচ্ছে ১০টি ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে প্রতি গ্রুপের বিরুদ্ধে দেশে একটি করে মামলা করা হবে। রায় হওয়ার পর সম্পত্তি জব্দ করা হবে। কাজটা করা হবে খুব সতর্কতার সঙ্গে। এরপর মামলা করা হবে বিদেশে, যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে। তখন তারা বাংলাদেশে হওয়া রায়ের প্রতি আস্থা রাখবে।
# একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিয়মনীতি মানবেন না, আবার বলবেন তাঁদের মেরে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের এ প্রবণতা ঠিক নয়। আমরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে যাব। যাদের অসুবিধা আছে, তাদের জন্য একটা টাস্কফোর্স করে দিয়েছি।
# যাদের সমস্যা, তাদের বাঁচার মতো সামর্থ্য আছে কি না, তারা তা দেখবে। যদি বাঁচার মতো সামর্থ্য থাকে এবং ৫-১০ বছরও যদি লাগে, তাদের বাঁচতে দেওয়া হবে নিয়মের বাইরে গিয়ে হলেও।
# যদি দেখা যায়, ২০ বছর পরও তার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাহলে তাকে নতুন করে টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।
উত্তর: সময় লাগবে। এ প্রক্রিয়ায় অ্যাঙ্গোলা ১৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে পেরেছিল। সময় লেগেছে পাঁচ বছর। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, আশা করছি, ভবিষ্যতে অন্যরা শিক্ষা নেবে। তবে অর্থ পাচার যে পুরোপুরি বন্ধ হবে, সে আশা করি না। বিদেশে থাকা বাংলাদেশির সন্তানেরা দেশে আসে না কেন? আসে না, কারণ এখানে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করে না। তারা মনে করে যে এখানে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয় না। ব্যবসা করতে পদে পদে বাধা। এসবের সঙ্গে তারা অভ্যস্ত নয়। অর্থ কোথায় যায়? অর্থ যায় মালিকের কাছে। মালিক যদি বিদেশে থাকে, অর্থও সেখানেই যাবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে যে আলোচনা আছে, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কারের প্রয়োজন আছে কি না?
উত্তর: আমি স্বাধীনভাবেই কাজ করছি। ২৫-৩০টি সংস্কারের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। সব শেষ করে যেতে পারব কি না, জানি না। তবে শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি, এক বছরের মধ্যে অনেক উদ্যোগ শেষ করা সম্ভব হবে। আমি তো সব সময় থাকব না, বর্তমান সরকারও বেশি দিন থাকবে না। তাই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার ও শক্তিশালী করার প্রস্তাব নিয়ে সরকারের কাছে যাব। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছিল, সেটা যেন ভবিষ্যতে আর না হয়। গভর্নর পদে যাঁরা আসবেন, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেন যোগ্য ব্যক্তিরা এই পদে নিয়োগ পান। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর যদি কানাডার নাগরিক হতে পারেন, তাহলে আমরা কেন যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে এই পদে নিয়োগ দিতে পারব না? যোগ্যরা নিজে কেউ এ পদের জন্য আগ্রহী হবেন না, যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। এখানে নেতৃত্বে কিছু ঘাটতি ছিল, এ জন্য তৎকালীন সরকার দায়ী। ব্যাংক খাতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চয়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে সরকারের শাসনব্যবস্থা যদি ভালো না হয়, কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে না।
প্রশ্ন: রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ যেভাবে গঠন করা হয়, সেই প্রক্রিয়া কি ঠিক আছে?
উত্তর: দেশের ব্যাংক খাতে এখনো দ্বৈত শাসন চলছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে সরকার চালাচ্ছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১০ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তৈরির মাধ্যমে নতুন করে এটা শুরু করেছিল বিদায়ী সরকার। এটা এখনই বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। সব ব্যাংক পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগটিকে রাখা হলে তারা বিমা খাত, বন্ডবাজার, পেনশন ফান্ড ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারে। এটা নিয়েও আমরা সরকারের কাছে যাব।
প্রশ্ন: রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিয়োগের কাজটা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমেই। এর ফলে ব্যাংকগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
উত্তর: এটা করাই হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ব্যাংকগুলো লুট করার জন্য। সেটিই তারা করেছে। এক বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এননটেক্সের মতো প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল। তখন এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পর্ষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা কী করেছেন?
প্রশ্ন: সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের আস্থা অনেক কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংক আমানতে। আস্থা ফেরাতে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমরা ব্যাংক রেজল্যুশন আইন করতে যাচ্ছি। প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। দু-তিন মাসের মধ্যে অনুমোদন হয়ে যাবে। অধ্যাদেশ জারি হবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান যাচাই করা হচ্ছে। ছয়টি ব্যাংক দিয়ে শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ২৪ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই করা হবে। পাশাপাশি ফরেনসিক নিরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এতে বের হয়ে আসবে টাকাগুলো কোথা থেকে কোথায় গেল। এটা মামলার কাজে ব্যবহার করা হবে। এরপর বুঝতে পারব এ খাতের প্রকৃত চিত্র। বাংলাদেশে আগে কখনো এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একসঙ্গে এত ব্যাংক লুটের ঘটনা বিশ্বের কোথাও হয়নি। তবে ব্যাংক লুট বন্ধ হয়ে গেছে এবং ফিরতে শুরু করেছে গ্রাহকের আস্থা। সব ব্যাংক হয়তো বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তবে আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাবেন।
প্রশ্ন: অনেক ব্যাংকের মূলধন তো ‘নাই’ হয়ে গেছে। এসব ব্যাংক নিয়ে কী করবেন?
উত্তর: আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, দেশে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই ব্যাংক কমিয়ে আনা প্রয়োজন। এ জন্য একীভূত, অধিগ্রহণ, অবসায়ন, মূলধন জোগান দেওয়াসহ সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। কিছু ব্যাংক আছে যেখানে ৮৭ শতাংশ অর্থ এস আলম একাই নিয়ে গেছে। এ ব্যাংকের ভাগ্যে কী হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। আমরা বিদেশ থেকে মূলধন জোগানের জন্য তহবিল পাব বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৫০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকও এ জন্য অর্থ দেবে। আমরা বন্ড ছেড়ে পরে ব্যাংকগুলোকে দেব। এভাবে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকে পরিণত করার চেষ্টা করা হবে। তবে এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অবশ্য দু-তিনটি ব্যাংকের বিষয়ে এ বছরেই কাজ শুরু করতে চাই। সবকিছু করা হবে আমানতকারীদের স্বার্থ বজায় রেখে। আমাদের উদ্দেশ্য—আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। আমি শতভাগ নিশ্চিত, এটা করতে পারব। গণমাধ্যম যেন কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায়, এটা আমার প্রত্যাশা। আমরা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনব, আমানতকারীরাও টাকা ফেরত পাবেন। ব্যাংকের সংখ্যা কমুক বা বাড়ুক, তাতে কারও কিছু আসে যায় না। আমি ব্যাংক বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব নিইনি, আমানতকারীদের স্বার্থ দেখা আমার কাজ। ব্যাংক মরতে হলে মরবে, আমানতকারী বেঁচে থাকবেন।
প্রশ্ন: রিজার্ভ চুরির অর্থ আদায়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি?
উত্তর: কিছুটা অগ্রগতি আছে। আমেরিকার আদালতে মামলা চলছে। ফিলিপাইনের ব্যাংকটা নিয়মনীতি না মেনে টাকা ছাড় করেছে। তাদের বড় রকমের ঘাটতি আছে। আমরা আশাবাদী, ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: আপনার হাতে এই মুহূর্তে পাঁচটা বড় কাজ কী, যা করে যাওয়া উচিত?
উত্তর: কাজ তো অনেক। তবে আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরত আনা। সেখানে তিনটা জায়গায় কাজ করেছি। লেনদেনের ভারসাম্যে স্বস্তি চলে এসেছে। রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করিনি। চার মাসের মতো আমদানি দায় পরিশোধের রিজার্ভ আছে। বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। মূল্যস্ফীতি এ মাসে ১ শতাংশ কমেছে। আশা করি এটা জুনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসবে। যদি বেঁচে থাকি, আগামী বছরের মধ্যে (২০২৬ সালের জুন) মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসব। আর রাজনৈতিক সমর্থন পেলে ব্যাংক রেজল্যুশন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই করা হবে। এখানে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সংস্কার করার চেষ্টা করছি। আমাদের কার্যক্রমগুলো পুনর্গঠন ও সুনির্দিষ্ট করব নতুনভাবে। বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে ব্যাংক খাতের সুশাসনের ওপর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, আমরা সমস্যা চিহ্নিত করতে পারি; কিন্তু সমাধান করতে পারি না। কালক্ষেপণ করে এসব সমস্যার সমাধান হয় না। আমাদের কঠোর হতে হবে। এ জন্য সাংবাদিকদেরও সহায়তা প্রয়োজন। একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিয়মনীতি মানবেন না, আবার বলবেন তাঁদের মেরে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের এ প্রবণতা ঠিক নয়। আমরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে যাব। যাদের অসুবিধা আছে, তাদের জন্য একটা টাস্কফোর্স করে দিয়েছি। যাদের সমস্যা, তাদের বাঁচার মতো সামর্থ্য আছে কি না, তারা তা দেখবে। যদি বাঁচার মতো সামর্থ্য থাকে এবং ৫-১০ বছরও যদি লাগে, তাদের বাঁচতে দেওয়া হবে নিয়মের বাইরে গিয়ে হলেও। আর যদি দেখা যায় ২০ বছর পরও তার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাহলে তাকে নতুন করে টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই। তাদের বিষয়ে কঠোর হতে হবে। এই জায়গাগুলোতে কাজ করছিও। আশা করি সফল হব। আমাকে নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। তবে আমার কাজ আমি করে যাব, অন্যরা যা বলার বলে যাক।
উত্তর: আপনাদেরও ধন্যবাদ।