খালি পেটে বা ইফতারের শুরুতে লেবু-পানি খাওয়া কি কারও কারও জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

সকালে খালি পেটে কিছু বিশেষ পানীয় খাওয়ার বহুবিধ উপকারিতার কথা হয়তো জানেন। এসবের মধ্যে সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় একটি পানীয় লেবু-পানি। ইফতারের শুরুতেও তৃষ্ণা মেটাতে হয়তো লেবু-পানি বা লেবুর শরবত খান অনেকে। লম্বা সময় খালি পেটে থাকার পর লেবু দিয়ে তৈরি করা পানীয় খেলে লেবুর পুষ্টিগুণ নিশ্চয়ই পাবেন। কিন্তু আদতে কি এই অভ্যাস সবার জন্য পুরোপুরি নিরাপদ?

ইফতারের শুরুতেও অনেকে লেবু-পানি বা লেবুর শরবত খান
ইফতারের শুরুতেও অনেকে লেবু-পানি বা লেবুর শরবত খান

খালি পেটে পানি খাওয়া দারুণ অভ্যাস। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে দেহে পানির যে ঘাটতি হয়, তার অনেকটাই পূরণ হয়ে যায় এক গ্লাস পানিতে। পানিতে কিছু মিশিয়ে নিলে পানি হয়ে ওঠে পুষ্টিকর। স্বাদেও আসে ভিন্নতা। তবে পানিতে যেকোনো উপকারী উপাদান মিশিয়ে পানীয় তৈরি করেই যে আপনি খালি পেটে তা খেয়ে নেবেন, ব্যাপারটা কিন্তু এমনও নয়। কিছু কিছু পানীয় খালি পেটে খেলে কারও কারও কিছু অসুবিধা হতে পারে। লেবু মেশানো পানীয়ের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা যেমন।

খালি পেটে লেবু–পানি খেলে যা হয়

লেবুর রসে আছে সাইট্রিক অ্যাসিড। আবার আমাদের পাকস্থলীতে স্বাভাবিক নিয়মেই অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। এটি হলো হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। যখন আপনার পেট খালি থাকে, তখনো কিন্তু পাকস্থলীর এই নিঃসরণ বন্ধ হয় না। বরং লম্বা সময় না খেয়ে থাকলে বেশ কিছুটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড জমা হয় পাকস্থলীতে। এখন আপনি যদি এ অবস্থায় লেবু–পানি, অর্থাৎ সাইট্রিক অ্যাসিড গ্রহণ করেন, তাহলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাই আপনার অ্যাসিডিটিতে ভোগার ঝুঁকি থাকবে। খালি পেটে লেবু–পানি খেলে তাই কারও কারও টক ঢেঁকুর উঠতে পারে, পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে, পেট ফাঁপতে পারে। কারও কারও পেটব্যথাও হতে পারে। লেবুর সঙ্গে অন্য কোনো উপাদান যোগ করা হলেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সাহ্‌রির সময় বেশি পানি খেয়ে ফেললে কী হয়?

সাহ্‌রির সময় বেশি পানি খেয়ে ফেললে কী হয়?

খাবার কিংবা পানি খাওয়ার পর লেবু–পানি খেলে যা হয়

খালি পেটে লেবু–পানি খেলে তাই কারও কারও টক ঢেঁকুর উঠতে পারে, পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে, পেট ফাঁপতে পারে
খালি পেটে লেবু–পানি খেলে তাই কারও কারও টক ঢেঁকুর উঠতে পারে, পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে, পেট ফাঁপতে পারে

খালি পেটে থাকা অবস্থায় আপনার পাকস্থলীতে যে অ্যাসিড জমা হয়েছিল, খানিকটা খাবার খেলে সেই অ্যাসিড খাবারটা পরিপাকের কাজে অংশ নেবে। অর্থাৎ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে আসবে। এরপর লেবু মেশানো পানীয় গ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হবে পাকস্থলীতে। তবে সেটিও একেবারে খাবার গ্রহণের ঠিক পরপর নয়। কারণ, খাবার খাওয়ার পরপরই পানি বা যেকোনো পানীয় খেলে খাবার পরিপাকে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

আবার আপনি যদি খালি পেটে খাবার না খেয়ে কেবল আধা গ্লাস পানি খেয়ে নেন, সেটাও কিন্তু ভালো। এ ক্ষেত্রে আপনার পাকস্থলীতে জমা হওয়া অ্যাসিড এই পানির সঙ্গে মিশে লঘু হয়ে যাবে। তারপর আপনি লেবু দিয়ে কোনো পানীয় তৈরি করতে পারেন এবং অনায়াসেই তা খেয়ে নিতে পারেন। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে খালি পেটে লেবু-পানি গ্রহণজনিত শারীরিক সমস্যাগুলোর ঝুঁকি থাকে না।

রমজান মাসে কোন সময় চিয়া সিড খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন

রমজান মাসে কোন সময় চিয়া সিড খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন

তাহলে কখন খাবেন লেবু–পানি

একেবারে খালি পেটে কিংবা খাবার খাওয়ার ঠিক পরপর নয়, বরং আপনি অন্য একটা সময় বেছে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, খাবার খাওয়ার অন্তত মিনিট বিশেক আগে কিংবা পরে পানি বা পানীয় খাওয়া সবচেয়ে ভালো। ইফতারের শুরুতে অন্যান্য খাবার খেয়ে নিন। খাবার খাওয়ার অন্তত মিনিট বিশেক পর লেবু–পানি খেতে পারেন। চাইলে আবার ইফতার এবং রাতের খাবারের মধ্যে অন্য কোনো একটা সময়ও বেছে নিতে পারেন। তাতে সারা দিনের পানির চাহিদা পূরণও সহজ হবে। পবিত্র রমজান মাস পেরিয়ে গেলে যদি আপনি সকালে লেবু-পানি খেতে চান, সে ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠেই আধা গ্লাস পানি খেয়ে নিন, কোনো কিছু না মিশিয়েই। পানি খাওয়ার মিনিট বিশেক পর লেবু-পানি খাবেন। এর অন্তত মিনিট বিশেক পর সকালের নাশতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *