
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বসেছিল মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২৬তম আসর। অনুষ্ঠানের বড় চমক ছিলেন শাকিব খান। ঢাকাই সিনেমার এই তারকা ২৫ বছর ধরে তিনি চলচ্চিত্রশিল্পে অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর কাজের বিশেষ দৃশ্যগুলো তুলে ধরা হলো পর্দায়। পূজা চেরী, নিরব, ইমন ও রোশানের অংশগ্রহণে ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘দিল দিল দিল’, ‘আসছে তুফান’সহ বিভিন্ন গানের সঙ্গে ছিল বিশেষ নৃত্য পরিবেশনা। চলচ্চিত্রে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে শাকিব খানের হাতে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের রজতজয়ন্তীর বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও নির্মাতা মতিন রহমান। এরপর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় শাকিব খান কথা বলেন নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ার, উত্থান-পতনসহ নানা প্রসঙ্গে।
চলচ্চিত্রে শুরুর গল্প বলতে গিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, দেখতে শুনতে হয়তো একটু ভালোই ছিলাম। একটা সিনেমার অফার পেলাম, বলল তিন মাস সময় লাগবে। তিন মাসেই সিনেমা শেষ হয়ে যাবে। তিন মাসের জন্য এলাম, আর ফিরে যাওয়া হলো না। ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। এই ২৫ বছরে এত ভাঙাগড়া দেখেছি চলচ্চিত্রে, এত রং দেখেছি জীবনের। কখনো খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছি, কখনো অবাক হয়েছি, কখনো খুব দুঃখিত হয়েছি, কখনো রোমাঞ্চিত হয়েছি। আবার অনেক সময় অনেক কষ্টের সাগরেও ভেসেছি।’
নিজের কঠিন সময়ের কথা বলতে গিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘এই চলচ্চিত্র (জগৎ) সত্যি অনেক রং দেখাইয়াছে। একসময় যখন সত্যিই খুব হতাশ হয়ে যেতাম। ভাবতাম, সত্যিই হয়তো বা আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। আপনাদের হয়তো কারও কারও মনে থাকতে পারে, কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে যখন এসেছি কিছু কারণে অনেক কাছের মানুষকেও বলতে শুনেছি, “তোমার দিন শেষ শাকিব, ইউ আর ডেড হর্স।” নিজের চেনা মুখগুলোকেই পাল্টে যেতে দেখেছি। অবাক হয়েছি, দুঃখিত হয়েছি। ভেবেছি হয়তো এখানেই শেষ। ইতি টানতে হবে। আবার ভেবেছি, যাওয়ার আগে একটা ট্রাই (চেষ্টা) তো করে যাই। এত বছর ধরে মানুষ আমাকে এত ভালোবাসল, একটা ট্রাই করে যাই। না হলে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব চলচ্চিত্র। শূন্য হাতে এসেছিলাম, যা পেয়েছি তা অনেক।’

এরপর ২০২৩ সালে হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ান শাকিব খান। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু “প্রিয়তমা” দিয়ে আমার সেকেন্ড ইনিংস শুরু হয়েছে; যেটা সবাই বলে। যখন “প্রিয়তমা” মুক্তি পেয়েছে এত মানুষের ভালোবাসা…এই প্রথম আমার চলচ্চিত্র, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে গিয়ে এত সফল হচ্ছে। প্রতিটি মানুষ দেখতে যাচ্ছে, সাফল্যের জোয়ারে ভাসাচ্ছে। “প্রিয়তমা”র পর “রাজকুমার” এসেছে, তারপর “তুফান” এসেছে, সবার মনে তুফান ধরিয়ে দিয়েছে। “তুফান”-এর পর সেই মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে নীরবে বলেছি, আমার দিন শেষ হয়নি, দিন তো মাত্র শুরু। যে স্বপ্ন আমি সারা জীবন দেখে এসেছি, পৃথিবীজুড়ে আমার চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে, হলিউড–বলিউড বড় বড় সিনেমার পাশাপাশি আমাদের সিনেমার পোস্টার থাকবে, সেই স্বপ্নের পথেই হেঁটেছি এবং সফল হয়েছি। এখন দেশ–বিদেশের সবাই গর্ব করে বলে এটা আমাদের চলচ্চিত্র, আমাদের শাকিব খান।’
গত রোজার ঈদে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত মেহেদী হাসান পরিচালিত সিনেমা ‘বরবাদ’। এ ছবিও সাড়া ফেলে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সিনেমাটির সাফল্য নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন।

সে প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন একটা পরিস্থিতি চলছে, এই পরিস্থিতিতে আমার সিনেমা গত ঈদে মুক্তি পাচ্ছে, তখন সেই মানুষগুলোর মুখেই আমি শুনেছি, “এবার কোথায় যাবে? এবার তো ধরা খেয়েছ। সন্ধ্যার পরে তো আর সিনেমার শো চলবে না। লগ্নিও উঠবে না, মুক্তির আগেই সিনেমা সুপার ফ্লপ।” সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, মুক্তির পর কী হয়েছে সেটা তো আপনারা সবাই জানেন, ভালোবাসার জোয়ারে সবাইকে “বরবাদ” করে দিয়ে গেছে।’
‘বরবাদ’ মুক্তির পর দেশের কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মিডনাইট শো চলেছে। তাঁর ক্যারিয়ারে এটা প্রথমবার হয়েছে বলেও জানান শাকিব। এ জন্য তিনি দর্শকের প্রতি আবার কৃতজ্ঞতা জানান।