ছোটখাট পদ্ধতি অনুসরণে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। ভালো থাকার পেছনে শুধু ঘুম বা ব্যায়াম নয়, প্রতিদিনের খাওয়ার ধরনেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে শরীর ও মনের ওপর।
আধুনিক জীবনের ব্যস্ততার মাঝে অনেকে খাবারকে কেবল প্রয়োজন হিসেবেই দেখে, অনুভব বা সচেতনতার জায়গা থেকে নয়। অথচ সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করলে শরীরের শক্তি জোগানোর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিরও উৎস হতে পারে।
রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ এবং শিশু চিকিৎসক ডা. তোকুনবো আকান্দে।
মার্কিন পুষ্টিবিশেষজ্ঞ আলিনা নাজারি নিজে দীর্ঘদিন শরীর ও মনের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তখন তিনি খাবারের গুরুত্ব বুঝে অধ্যয়ন শুরু করেন পুষ্টি এবং আয়ুর্বেদের ওপর।
তার মতে, “ছোট ছোট কিছু অভ্যাসই দিনে প্রাকৃতিকভাবে প্রাণশক্তি এবং মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারে।”
দিন শুরু গরম পানি দিয়ে
রাতভর ঘুমের পর শরীর মৃদু পানিশূন্য অবস্থায় থাকে। এ কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানি পানের পরামর্শ দেন আলিনা নাজারি।
তার ভাষায়, “গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের পর যেসব রোগী গরম পানি পান করেছেন, তাদের অন্ত্রের গতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়েছে।”
গরম পানির সাথে লেবু বা আদা যোগ করা যেতে পারে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। গরম পানিই মূল উপাদান, যা পরিপাকতন্ত্র জাগিয়ে তোলে এবং শরীরকে অভ্যন্তরীণভাবে উষ্ণ করে।
আমাদের দেশের আবহাওয়াতেও এই অভ্যাস সহজেই গ্রহণযোগ্য। অনেকেই সকালবেলায় চা পান করেন। তবে চায়ের বদলে এক কাপ সাধারণ গরম পানি পান করলে শরীর অনেক বেশি হালকা ও সতেজ অনুভব করে।
হাতে দিয়ে খাওয়া-যখন সম্ভব
এই অভ্যাস শুনতে কিছুটা অদ্ভুত লাগলেও এর পেছনে রয়েছে গভীর বিজ্ঞান।
আলিনা নাজারি বলেন, “হাতে খেলে খাওয়া ধীরগতির হয়, ফলে বেশি সচেতনভাবে খাওয়া হয়। যা অতিরিক্ত খাওয়া কমায় এবং পরিপূর্ণতা অনুভব করায়।”
বিশ্বের বহু সংস্কৃতিতেই বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা এবং আরব দেশগুলোতে, হাতে খাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশেও বেশিরভাগ সময়েই মানুষ হাতে খেয়ে থাকেন। এটি শুধু ঐতিহ্যের বিষয় নয়, বরং এক ধরনের ইন্দ্রিয়গত সংযোগ, যেখানে খাবারের স্পর্শ, গন্ধ, উষ্ণতা।
এসব কিছু মিলিয়ে মনেও একটা প্রশান্তি আসে। এছাড়া চিপস বা বাদামের খোসা ছাড়ানোর মতো কাজগুলো মনোযোগ বাড়ায় এবং খাওয়ার গতি কমিয়ে দেয়, যা হজমের জন্য উপকারী।
গরম ও রান্না করা খাবার বেছে নেওয়া
বাজারে কাঁচা সালাদ বা ‘কোল্ড ফুড’ এখন ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও এটি প্রচলিত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে শরীর ও হজমের জন্য গরম, রান্না করা খাবারের উপকারিতা অনেক বেশি।
আলিনা বলেন, “রান্নার মাধ্যমে আঁশ ও জটিল কার্বোহাইড্রেইট নরম হয়, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।”
ডা. তোকুনবো আকান্দে যোগ করেন, “গরম খাবার পেটকে শিথিল করে, ফলে হজম ভালো হয় এবং ফোলাভাব বা গ্যাস কমে।”
গরম খাবার স্বাদে এবং ঘ্রাণেও বেশি আকর্ষণীয়।
বাংলাদেশে ভাত, ডাল, তরকারি সব গরম খাবার মূল খাদ্য। তাই এই অভ্যাস পালন করা তুলনামূলকভাবে সহজ। বরং ঠাণ্ডা খাবারের পরিবর্তে গরম খাবার বেছে নিলে পরিপাক স্বাস্থ্য আরও ভালো থাকবে।
বাকি খাবার সংরক্ষণে বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহার
প্রতিদিন রান্না করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই বাকি রাখা খাবার বা বেচে যাওয়া খাবার খাওয়া একটি সাধারণ অভ্যাস। তবে এই খাবার খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা জরুরি।
ডা. আকান্দে বলেন, “যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করলে বাকি খাবারে ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে পারে, যা খাদ্যজনিত অসুস্থতা ডেকে আনে।”
আলিনা আরও উল্লেখ করেন, “বাকি থাকা খাবারে প্রাকৃতিকভাবে ‘হিস্টামিন’ নামে এক উপাদান বেড়ে যায়, যা অনেকের হজমের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।”
এ কারণে একাধিকবার গরম না করে একবারেই ভালোভাবে গরম করতে হবে। আর বেচে যাওয়া খাবার সরাসরি বরফে জমিয়ে রাখতে পারলে বেশি ভালো।