ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গি হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে জিম্মিদের উদ্ধার করতে আসা দুই পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন। নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের দিনটি স্মরণ ও নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গত বছরের ৬ আগস্ট ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে টানিয়ে দেওয়া হয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের পোস্টার। এরপর এখনো ভাস্কর্য মেরামত করা হয়নি। এমনকি প্রতি বছরের মতো এবার রাষ্ট্রীয়সহ দলমত নির্বিশেষে ১ জুলাই সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর কোনো আয়োজন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বুধবার গুলশানে ভেঙে ফেলা সেই ভাস্কর্যের জায়গায় শহীদ দুই পুলিশ সদস্যের ছবি সংবলিত শোক ব্যানার স্থাপন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচি পালন করেছেন একদল সাধারণ শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, প্রতি বছর ১ জুলাই হলি আর্টিসানের সামনে রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়। ফুল দিয়ে দিনটি স্মরণ করা হয় জাপানি, ইতালীয়, ভারতীয়সহ নিহত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের। তবে এ বছর জঙ্গি হামলার ৯ বছর পূর্তিতে বাড়িটির সামনে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা, ছিল না শ্রদ্ধাঞ্জলির আয়োজন। শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গুলশানে ভেঙে ফেলা সেই ভাস্কর্যের সামনে যান তারা। পরে সেখানে তারা হলি আর্টিসান বেকারিতে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে শহীদ তৎকালীন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিনের ছবি সংবলিত শোক ব্যানার স্থাপন করেন। পরে তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তারা জানান, ব্যানার লাগানোর সময় একজন কনস্টেবল অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চেয়েছিলেন। পরে শিক্ষার্থীরা গুলশান থানার দ্বিতীয় তলায় ডিউটি অফিসারের কাছে গিয়ে তাকে পাননি। এরপর তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে গেলে ওই কর্মকর্তা ভাস্কর্য ঠিক করতে এসেছেন কি না জানতে চান। এ সময় তিনি ঠিক করতে নয়, শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন এবং অনুমতি পেলে এক মাসের মধ্যে ঠিক করা হবে বলে ওসিকে জানান। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন বলে জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা নিচে এসে ভাস্কর্যের ওই স্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইব্রাহীম বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিসানে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করার জন্য আমাদের অকুতোভয় পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে যান ও তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। প্রতিহত করার চেষ্টাকালে আমাদের দুজন অকুতোভয় পুলিশ সদস্য নিহত হন। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। কিন্তু দুঃখ ও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রতি বছরের মতো পুলিশ এখানে কোনো ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট তাদের স্মরণে যে ভাস্কর্য বানানো হয়েছিল, সেটি ভাঙচুর করে হিজবুত তাহরীর এবং এখানে পোস্টার টানিয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় এক বছর কেটে গেলেও এখনো ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যদি পুলিশ আমাদের অনুমতি দেয়, আমরা সেটি করব। কারণ তারা আমাদের অনুপ্রেরণা। আমরা তাদের সবসময় স্মরণ করতে চাই। তাদের পরিচয় ছিল দায়িত্বশীল-মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা। আমরা তাদের আত্মবলিদানকে স্মরণ করতে চাই। সব পুলিশ সদস্য যাতে তাদের আত্মবলিদানে বলিষ্ঠ হয়ে মানবসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন, সেই আহ্বান রইল।