এক বছর পরেও অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে যিনি আছেন- ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তী এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত অতীতের জন্যে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন নিরপেক্ষতা ও সংস্কারের প্রশ্নে সরকার একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ অনুসরণ করবে। কিন্তু এক বছর পরেও এখন দেখা যাচ্ছে, সরকার যেমন রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত তেমনি প্রশাসনিকভাবে ব্যর্থ ও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। ফলে যে পরিবর্তনের জন্য বিপ্লব ঘটেছিল সেই পরিবর্তন আজ স্থবিরতার মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিকভাবে এই সরকার প্রথম থেকেই বলেছিল, জাতীয় ঐক্য গঠনের মাধ্যমে একটা স্বচ্ছ অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সেই জাতীয় ঐক্য ধারণাটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ধূসর হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের রক্তাক্ত জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে মোড় পরিবর্তন এসেছিল তাতে জনগণের মনে এক ধরনের আশার সঞ্চার ছিল। দীর্ঘমেয়াদি দমনমূলক শাসনের অবসান, প্রশাসনিক অপচয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে অনেকেই ভেবেছিল দেশ এবার হয়তো একটা নতুন পথে পা দেবে। পরিবর্তন হবে নেতৃত্বে, নীতিতে ও রাষ্ট্র চিন্তায়। সময়ের ব্যবধানে সেই আশা ভঙ্গ এখন জনগণের হতাশায় পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে, মতবিনিময় হয়েছে কিন্তু কোনো কাঠামোগত ভিত্তি তৈরি হয়নি উল্লেখ করে জিল্লুর বলেন, ‘অনেক দল আজ বলছে- সরকার এই সংলাপকে সময়ক্ষেপণের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। আসলেই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। অন্যদিকে সরকার বলছে, সংস্কার বাস্তবায়নে সময় দরকার। এই দোটানার মধ্যেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জনগণের কাছে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পৌঁছাচ্ছে না। এই অনিশ্চয়তা আর সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে যেটি সবচেয়ে প্রকটভাবে সামনে এসেছে তা হলো দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত গণপিটনি, সাংবাদিক নির্যাতন, ছাত্রদের ওপর পুলিশি দমন, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা; এমনকি একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপরে প্রকাশ্যে হামলা- এই সবকিছুই স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে প্রশাসন ব্যর্থ। জিল্লুর আরো বলেন, ‘রাষ্ট্র নিজেই নিজের দায়িত্ব থেকে পিছু সরেছে। অপরাধী ধরা পড়ে না, মামলার অগ্রগতি নেই বরং বরাবরের মতো দায় চাপানো হয় অজানা শক্তির ওপর। এভাবে একটা অন্তর্বর্তী সরকার যদি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে তার নৈতিক ভিত্তি আসলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।’