শুরু হলো হিজরি সনের দ্বিতীয় মাস সফর। এই মাসে মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ আমল নেই। তবে জাহেলি যুগের মানুষ এই মাসকে অশুভ মনে করত। ফলে তারা এই মাসে বড় কোনো উদ্যোগ নিতে ভয় পেত।
বিয়েশাদি, ব্যবসা-বাণিজ্য, দূরের সফর এড়িয়ে চলত। এই মাস ঘিরে তাদের লালন করা ধারণাগুলো ছিল নিছক কুসংস্কার, ইসলামের দৃষ্টিতে যার কোনো ভিত্তি নেই। বরং ইসলাম এ ধরনের অশুভ লক্ষণ নির্ধারণকে নিষিদ্ধ করেছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই।
কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, সফর মাসকেও অশুভ মনে করা যাবে না এবং প্যাঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত রয়েছে তা-ও অবান্তর। তখন এক বেদুইন বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার উটের পাল অনেক সময় মরুভূমির চারণভূমিতে থাকে, মনে হয় যেন নাদুসনুদুস জংলি হরিণ। অতঃপর সেখানে কোনো একটি চর্মরোগ আক্রান্ত উট এসে আমার সুস্থ উটগুলোর সঙ্গে থেকে এদেরকেও চর্মরোগী বানিয়ে দেয়। তিনি বললেন, প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করল কে? মা’মার (রহ.) বলেন, জুহরি (রহ.) বলেছেন, অতঃপর এক ব্যক্তি আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের সঙ্গে একত্রে পানি পানের জায়গায় না আনা হয়।
আবু হুরায়রা (রা.)-এর এই হাদিস শুনে এক ব্যক্তি বলল, আপনি কি এই হাদিস বর্ণনা করেননি যে নবী (সা.) বলেছেন, সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছু নেই, সফর মাসকে অশুভ মনে করবে না এবং প্যাঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত আছে তা অবান্তর? তখন আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, না, আমি তোমাদের কাছে এরূপ হাদিস বলিনি। জুহরি (রা.) বলেন, আবু সালামাহ (রা.) বলেছেন, তিনি অবশ্যই এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, তবে আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে এই হাদিস ছাড়া কখনো কোনো হাদিস ভুলে যেতে শুনিনি। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯১১)
তাই কোনো মুসলমানের জন্য এই মাস ঘিরে জাহেলি ভ্রান্ত কুসংস্কারগুলো বিশ্বাস করা উচিত নয়। শুধু এই মাসই নয়, কোনো মাসকেও অশুভ অলক্ষ্মী ভাবা উচিত নয়, যেমন ইদানীং অনেককে অনলাইনে জুলাই মাসকে অলক্ষ্মী দাবি করতে দেখা গেছে। এ ধরনের বিশ্বাস ইসলামী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অনেক পরিবারে আবার নির্দিষ্ট মাসে বিয়েশাদিকে অকল্যাণের মনে করা হয়, যেমন—জাহেলি যুগের মানুষ সফর মাসে বিয়েশাদিকে অকল্যাণ মনে করত, এ কথারও কোনো ভিত্তি নেই। কেননা আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) নিজেই এই মাসে বিয়ে করেছেন বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) ২৫ বছর বয়সে উপনীত হলে খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হন। রাসুল (সা.)-এর চাচা আবু তালিব অভিভাবক হিসেবে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর মোহরানা হিসেবে ২০টি উট প্রদান করেন। ঐতিহাসিক এই বিবাহ সংঘটিত হয়েছিল সফর মাসে। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ২/২৬৫)
আবার তাঁর কন্যা ফাতেমা (রা.)-এর বিয়েও এই মাসেই দেন। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, দ্বিতীয় হিজরির সফর মাসে আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতেমা (রা.)-এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। (আস-সিরাহ আন নববিয়্যাহ লিবনে কাসির : ৪/৬১১)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সফর মাসকেন্দ্রিক কুসংস্কার থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।