মৃতের মস্তিষ্কেও থাকতে পারে প্রাণ, যা বলছে গবেষণা

মৃত্যুই শেষ নয়, সেখান থেকেও মানুষকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব! এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যাম পার্নিয়া। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি মৃত্যু সম্পর্কে এমন দাবি তোলেন। তার এই চাঞ্চল্যকর দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গেছে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মৃত্যু জীবনের শেষ নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া।

সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সেখান থেকে রোগীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব! অধ্যাপক পার্নিয়ার এই মন্তব্য চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং জীবন-মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের চিরাচরিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে বলেই মনে করছেন অনেকে।স্যাম পার্নিয়া নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাঙ্গোন মেডিক্যাল সেন্টারের ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং রিসাসিটেশন রিসার্চের পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও মৃত্যুর কাছাকাছি অভিজ্ঞতার (নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স) ওপর গবেষণা করছেন তিনি।

সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন।

এই অধ্যাপকের মতে, হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যাওয়াকে মৃত্যুর চূড়ান্ত মুহূর্ত হিসেবে গণ্য করা ভুল। তিনি মনে করেন, মৃত্যু আসলে একটি প্রক্রিয়া, যা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণ পর শেষ হয়। মাঝের সময়টিতে কিছু অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে একে বিপরীত দিকে চালিত করা সম্ভব।তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা মৃত্যু সম্পর্কে যা বিশ্বাস করি, তা ভুল।

এটি শেষ নয়, বরং একটি খারাপ বা প্রতিকূল অবস্থা।’পার্নিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, হৃৎস্পন্দন বন্ধ হওয়ার পরেও মস্তিষ্কের কোষগুলো তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয় না। বরং, সেগুলো কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েকদিন পর্যন্ত সচল থাকতে পারে। সঠিক সময়ে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ করলে এই কোষগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করা সম্ভব।

তিনি একমো (এক্সট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন) যন্ত্রের ব্যবহার এবং উন্নত সিপিআর কৌশলকে এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।

অধ্যাপক পার্নিয়া ও তার দল কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের রোগীদের ওপর বিশেষ ‘সিপিআর ককটেল’ প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। এই ককটেলটিতে এপিনেফ্রিন, ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফর্মিন, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ডাইউরেটিক ওষুধ ভ্যাসোপ্রেসিন এবং সাপ্লিমেন্ট সালবুটামিন-এর মতো ওষুধ রয়েছে।

প্রাণীদের ওপর চালানো গবেষণায়ও এই পদ্ধতি সফল হয়েছে বলে জানান তিনি। অধ্যাপক স্যাম পার্নিয়ার এই গবেষণা এবং মন্তব্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *