চুইংগাম চিবাতে ভালোবাসলে জেনে রাখুন কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছেন

চুইংগাম থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক নিঃসৃত হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে পরিবেশে মিশে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক অর্থাৎ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। খাবার কিংবা পানীয়তে মিশে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকও হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক চুইংগামে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ছোট্ট একটা চুইংগাম মাইক্রোপ্লাস্টিকে ভরপুর থাকে। শিশুরা তো বটেই, বড়দের মধ্যেও অনেকে চুইংগাম পছন্দ করেন।

ঠিক কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন

কিছু চুইংগাম বানানো হয় প্রাকৃতিক উপকরণে, কিছু আবার কৃত্রিম উপকরণ দিয়েও তৈরি হয়। তবে যে উৎস থেকেই চুইংগাম তৈরি হোক না কেন, তা রাবারের মতো একটু আঠালো ধরনেরই হয়। এই দুই ধরনের চুইংগাম থেকেই সমান পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক নিঃসৃত হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।

একটা চুইংগামের ওজন ২ থেকে ৬ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাত্র ১ গ্রাম চুইংগাম থেকেই গড়ে ১০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক নিঃসৃত হয়। এমনকি কিছু চুইংগামের প্রতি গ্রাম থেকে আসতে পারে ৬০০ মাইক্রোপ্লাস্টিকও। তার মানে একটা ছোট্ট চুইংগাম থেকেই শতসহস্র মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশে যেতে পারে আমাদের লালায়।

খাবার খাওয়ার পর তা যেমন পরিপাক হয়, মাইক্রোপ্লাস্টিক কিন্তু সেভাবে পরিপাক হয় না, রয়ে যায় অবিকৃত। লালায় মিশে যাওয়ার ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়তে পারে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে। সেখান থেকে রক্তেও পৌঁছে যেতে পারে এই ছোট্ট কণা। আর রক্তের মাধ্যমে চলে যেতে দেহের পারে যেকোনো অংশেই। মস্তিষ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেও জমা হতে পারে মাইক্রোপ্লাস্টিক।

মাইক্রোপ্লাস্টিকে যেসব ক্ষতি হয়

দেহের যেকোনো অঙ্গে জমা হওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানেই অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়ে যেতে পারে। ধারণা করা হয়, মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতিতে ডায়াবেটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া দেহের হরমোনের ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে একজন নারী কিংবা একজন পুরুষের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কোনো অঙ্গে অধিক পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হলে সেই অঙ্গের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে মস্তিষ্কের বিকাশ, নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা এবং স্মৃতিধারণের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই শিশুদের জন্য মাইক্রোপ্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

শেষ কথা

মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব বিষয়ে এখনো গবেষণা চলমান। তবে যতটা জানা গেছে, তা খুব একটা স্বস্তির নয়। দীর্ঘ মেয়াদে অনাকাঙ্ক্ষিত বহু সমস্যা এড়াতে আমাদের জীবনধারা এমনভাবে গড়ে তোলা ভালো, যাতে অতিরিক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের দেহে প্রবেশ করতে না পারে। চুইংগামে যেহেতু অনেকটা মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, তাই যেকোনো বয়সেই চুইংগাম কম খাওয়া উত্তম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *