সম্প্রতি টেস্টোস্টেরন থেরাপির অপব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ টেস্টোস্টেরন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ হরমোন, যা পুরুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি পেশির বৃদ্ধি, হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখা, শুক্রাণু উৎপাদন ও যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে সঠিক তত্ত্বাবধান ছাড়া টেস্টোস্টেরনের অপব্যবহার গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি কর্মক্ষমতা ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য টেস্টোস্টেরন থেরাপির অপব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ। তাই টেস্টোস্টেরনের অপব্যবহার ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে রাখুন।
যেসব ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের অপব্যবহার হয়
সাধারণত টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (টিআরটি) শুধু সেসব পুরুষের জন্যই চিকিৎসকেরা দেন, যাঁদের হাইপোগোনাডিজম বা টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিক মাত্রার নিচে থাকে। তবে কেউ কেউ টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকার পরও পেশির বৃদ্ধি, শক্তি বৃদ্ধি বা যৌনশক্তি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে টেস্টোস্টেরন ব্যবহার করেন। আর তা প্রায়ই চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিবন্ধিত ফুড সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধে এবং অনেক জিমে শারীরিক উন্নতি সাধনের জন্য ব্যবহৃত হয়। টেস্টোস্টেরনের এ ধরনের অপব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে।
অপব্যবহারের কারণ কী কী
শারীরিক উন্নতি: দ্রুত পেশি তৈরি এবং শক্তি বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা।
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্স বাড়াতে।
যৌনশক্তি বাড়াতে: যৌন আকাঙ্ক্ষা বা শক্তি বাড়াতে।
টেস্টোস্টেরনের অপব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টেস্টোস্টেরনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যার মধ্যে কিছু হতে পারে গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী।
১. প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি: টেস্টোস্টেরনের অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন উৎপাদন হ্রাস করে। ফলে অণ্ডকোষের আকার ছোট হয়ে যেতে পারে (টেস্টিকুলার অ্যাট্রোফি), শুক্রাণু উৎপাদন কমে যেতে পারে (অ্যাজোস্পার্মিয়া) এবং হতে পারে বন্ধ্যত্বের কারণ। এ ছাড়া এটি গাইনোকোমাস্টিয়ারও (পুরুষদের স্তন বড় হওয়া) কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২. কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা: গবেষণায় দেখা গেছে, টেস্টোস্টেরন অপব্যবহার হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি, খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বৃদ্ধি এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) হ্রাসের কারণ হতে পারে, যা হৃদ্রোগ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. যকৃতের ক্ষতি: বিশেষ করে ওরাল টেস্টোস্টেরন ব্যবহার যকৃতের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি অপব্যবহার যকৃতের প্রদাহ, সিস্ট, এমনকি যকৃতের টিউমারের কারণও হতে পারে।
৪. মানসিক ও আচরণগত প্রভাব: টেস্টোস্টেরনের অপব্যবহার মেজাজের পরিবর্তন, আক্রমণাত্মক আচরণ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
৫. ত্বকের সমস্যা: ব্রণ ও তৈলাক্ত ত্বক টেস্টোস্টেরন অপব্যবহারের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চুল পড়া বা পুরুষদের ক্ষেত্রে টাক পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পলিসাইথেমিয়া: লোহিত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা রক্ত ঘন করে এবং জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
ঘুমের সমস্যা: স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত।
প্রোস্টেটের সমস্যা: প্রোস্টেটের আকার বৃদ্ধি ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
শেষ কথা
টেস্টোস্টেরন একটি শক্তিশালী হরমোন এবং এর ব্যবহার অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের (এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা হরমোন বিশেষজ্ঞ) তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত। জীবনধারা, সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব, যা কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ হরমোন ব্যবহারের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর।