নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল দেবে ইসি। এমন অবস্থায় নির্বাচন সামনে রেখে দল থেকে এখন পর্যন্ত কারও মনোনয়ন চূড়ান্ত করা না হলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেউ বসে নেই। প্রতিটি নির্বাচনী আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা উঠান বৈঠক, ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, কর্মিসভাসহ সাংগঠনিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জনসম্পৃক্ততামূলক নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। মসজিদ-মন্দিরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই একেবারে ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় তারা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অবশ্য এরই মধ্যে যাদের অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট এবং যারা মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, তারা আর পেছনে ফিরে না তাকিয়ে পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। আর যাদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়, তারা দল থেকে যাতে চূড়ান্ত সিগন্যাল পেতে পারেন, সেজন্য কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। কেউ কেউ আবার দলের হাইকমান্ডেরও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিটি আসনে বিএনপির অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। সুতরাং প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আমাদের একটা সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া থাকবে। ব্যাপক পরিসরে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে প্রতি আসনে এবার একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বিএনপি এখনো প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া (স্ক্রটিনি) শুরু করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এলাকায় জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা-মেধা, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনাকে ধারণ করতে বিভিন্ন জায়গায় তারুণ্যের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করা হবে। মেধাবীদের পাঠশালা হবে আগামীর জাতীয় সংসদ। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রার্থীরা এবং বিভিন্ন এলাকায় আগের যারা রাজনীতিবিদ আছেন, তাদের বাইরেও কতটা যাওয়া যাবে, সেটাও প্র্যাকটিক্যালি দেখা হবে। এগুলো মিলিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি মাঠ জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করছে। প্রাথমিক জরিপ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কোন কোন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা এবং তাদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কার, কে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনপ্রিয়, ইমেজ কার ভালো এবং আন্দোলন-সংগ্রামে কে মাঠে ছিল—এসব ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতেই একাধিক জরিপ করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার নিজস্ব এবং দলীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেই এই পুরো প্রক্রিয়া দেখভাল করছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরপরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জনআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বিএনপি আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চায়। একই সঙ্গে বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। সেক্ষেত্রে একাধিকবার নির্বাচন করা অনেক পুরোনো মুখ এবার প্রার্থিতা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে অন্তত এমন দুই ডজন নেতার কপাল পুড়তে পারে। পাশাপাশি তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে শতাধিক আসনে তরুণ প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।