যেকোনো ওষুধে অ্যালার্জি, যা করবেন

যেকোনো ওষুধই অ্যালার্জি, র‌্যাশসহ শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম। তাই ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই সেবন করবেন না।

নানা রোগে আমরা ওষুধ সেবন করি। তবে এই ওষুধ আবার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বেশ কিছু চর্মরোগের নেপথ্যে মূল ভূমিকা রাখে কোনো না কোনো ওষুধ। এমন একটি সমস্যা ফলিয়েটিভ ইরাইথ্রোডার্মা। যে ওষুধগুলোর ব্যবহার থেকে এ রোগ হতে দেখা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সালফার। এ রোগে শরীরের ত্বকজুড়ে আঁশের মতো হতে দেখা যায়, যা ঘষলে ঝরে পড়তে থাকে। শুরুতে লাল লাল দাগ দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে তার বিস্তার ঘটতে থাকে এবং পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিনের মধ্যেই ত্বক আঁশ আকারে উঠে আসতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে জীবনাশঙ্কা তৈরি হয়।

এমন আরেকটি রোগ ড্রাগ ইরাপশন। নাম থেকেই বোঝা যায় ওষুধের কারণেই রোগটি হয়। এ ক্ষেত্রে ত্বকে র‌্যাশ বা চাকা ওঠে। ওষুধের কারণে সাধারণভাবে দুই ধরনের র‌্যাশ হতে পারে। যেমন আর্টিকেরিয়া, যাতে চাকা হয় ও চুলকানি থাকে। আর একধরনের র‌্যাশ হলো রবিফিলিফর্ম। শরীরজুড়ে লাল লাল দাগ অথবা ছোট ছোট দানা বা গোটার আকারে লালচে রঙের হতে দেখা যায়। সাধারণত যেসব ওষুধ একটু ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো হলো অ্যামোক্সাসিলিন, কোট্রামাইসোল, অ্যামপিসিলিন, পেনিসিলিন, সেফালোসেপারিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, সিমেটাডিন ইত্যাদি।

ফিং ড্রাগ ইরাপশন নামের আরেকটি রোগও হয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। দেখতে গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির লালচে চুলকানিযুক্ত, উঁচু অথবা ফোসকাযুক্ত যেকোনোভাবে দৃশ্যমান হতে পারে। সেরে যাওয়ার পর স্থানটি কালো হয়ে থাকে অনেক দিন। টেপ্রাসাইক্লিন, সালফোনামাইড, বারবিচুরেট, স্যালিসাইলেটস ইত্যাদি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এ সমস্যা হতে পারে।

স্টিভেন জনসনস সিনড্রোম নামের আরেকটি রোগ ওষুধের কারণে হয়। রোগটি অত্যন্ত জটিল এবং এর থেকে জীবনশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। প্রথমে ফোসকা আকারে দেখা দেয়। ঠোঁট, জিব, মুখের ভেতরে ঘা হয়। চোখে আক্রমণ ঘটলে অন্ধত্ব হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখ, হাত ও পায়ের তালুতে ফোসকা হতে দেখা যায়। ফুসফুস আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া গিরায় ব্যথা, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা, যকৃৎ বড় হওয়া এবং রক্তেও ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এ সমস্যা। বারবিচুরেট, কুইনিডিন, ফিনাইলবুটাজোন ইত্যাদি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এ সমস্যা হতে পারে।

অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ সেবন করেন। মনে রাখবেন, যেকোনো ওষুধই অ্যালার্জি, র‌্যাশসহ শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম। তাই ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই সেবন করবেন না। কোনো ওষুধ শুরু করার পর ত্বকে ফুসকুড়ি, জিবে ঘা বা র‌্যাশ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ তা বন্ধ করে চিকিৎসককে জানান। কারও কোনো ওষুধে প্রতিক্রিয়া হওয়ার ইতিহাস থাকলে ওষুধের নাম লিখে রাখুন এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসককে জানান।

ডা. জাহেদ পারভেজ, চর্মবিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *