বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবি

জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে এটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু আইনে নিষিদ্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুয়াদ আল নাসের (২৩) ধূমপানে আসক্ত ছিলেন। ধূমপান ছাড়তে দুই বছর আগে তিনি ই-সিগারেট (ইলেকট্রনিক সিগারেট) ব্যবহার শুরু করেন। পরে তাঁর ফুসফুসে সমস্যা ধরা পড়ে। ফুয়াদের মা নাসরিন বেগম বলেন, চিকিৎসকদের ধারণা, ই-সিগারেটের কারণেই তাঁর এ শারীরিক জটিলতা হয়।

তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন।

ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ধূমপানকে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং বলে। এ যন্ত্রের ভেতরে নিকোটিন, পানি ও সুগন্ধির দ্রবণ থাকে। ই-সিগারেটে নিকোটিন তরল আকারে থাকে, যা তাপে ধোঁয়া তৈরি হয়। সিগারেটের বিকল্প হিসেবে অনেকে ই–সিগারেট ব্যবহার করেন। ই-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা এখনো অজানা। এ নিয়ে নেই কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে এটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ভারতেও ই–সিগারেট উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কানাডাসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশেও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশে তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী লোক সিগারেটের বিকল্প হিসেবে দিন দিন ই-সিগারেটে ঝুঁকছেন। তবে বাংলাদেশে ই-সিগারেট ও এর বিভিন্ন উপাদান উৎপাদিত হয় না। কিন্তু আইনে নিষিদ্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ না হওয়ায় এর মান নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারিতেও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নেই।

জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্রের চিকিৎসক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেটে নিকোটিন বেশি পরিমাণে বের হয় বা সেবন হয়। এতে আসক্তি বাড়ে। এ ছাড়া বাজারে সস্তায় যেসব ভ্যাপ জুস পাওয়া যায়, এগুলোতে কী উপাদান থাকে, তা অজানা। নিকোটিন ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। আর ভ্যাপ জুসে রাসায়নিক উপাদান বেশি বেশি সেবনে ফুসফুসের আরও ক্ষতি করে। তাই এখনই সরকারের উচিত এর বাজারজাত নিষিদ্ধ করা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। আইনটি ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। আইনটি আবার সংশোধন করার কার্যক্রম চলমান। আইনটি সংশোধনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তিনটি সভা করেছে। এবারের সংশোধনীতে ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

২০১৯ সালে ভারতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশও আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সে উদ্যোগ তখন সফল হয়নি।

জানতে চাইলে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার মো. ফরহাদুর রেজা প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়ে জানা যাচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ঝুঁকি আছে। ক্ষতিকর বলেই বিভিন্ন দেশ এটি নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির সংশোধনী খসড়া পর্যায়ে আছে। এবারের সংশোধনীতে ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি থাকতে পারে।

* বাংলাদেশে তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী লোক সিগারেটের বিকল্প হিসেবে দিন দিন ই-সিগারেটে ঝুঁকছেন। * বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে এটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ভারতেও ই-সিগারেট উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। * বিশ্বে খুব ধীরগতিতে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমছে। সংখ্যাটি এক বিলিয়নের বেশি। তবে ই-সিগারেটের চিত্র ভিন্ন। এর ব্যবহারকারী দ্রুত বাড়ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ই-সিগারেটের যন্ত্র ও এর উপাদান কিনতে পাওয়া যায়। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে ভ্যাপিং ক্লাবও। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এগুলো মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা। এটি ৫৫০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া সুগন্ধিযুক্ত দ্রবণ (ভ্যাপ জুস), ব্যাটারি, ফিল্টার ও কয়েলও বিপণিবিতানগুলোতে কিনতে পাওয়া যায়।

তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, দেশে ব্যাপক হারে ছড়ানোর আগে এখনই সরকারের উচিত ই-সিগারেট আমদানি, বাজারজাত ও বিপণন নিষিদ্ধ করা।

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, ই-সিগারেট যদি ব্যাপক হারে ছড়ায়, তাহলে দেশের জনগোষ্ঠী ভয়াবহ আসক্তিতে পড়বে। তাই সরকারের উচিত এটি নিষিদ্ধ করা।

ই-সিগারেটের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের জন্য চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের চেয়ারম্যান মো. হাবিবে মিল্লাত, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকসহ ১৫৩ জন সাংসদ। চলতি বছরের মার্চের দিকে এই চিঠি দেওয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বে খুব ধীরগতিতে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমছে। সংখ্যাটি এক বিলিয়নের বেশি। তবে ই-সিগারেটের চিত্র ভিন্ন। এর ব্যবহারকারী দ্রুত বাড়ছে। ২০১১ সালে ই-সিগারেট ব্যবহারকারী ছিলেন ৭ মিলিয়ন, ২০১৮ সালে বেড়ে হয় ৪১ মিলিয়ন। বাজার বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটর বলছে, বিশ্বে ২০২১ সাল নাগাদ ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ছাড়াবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, ২০২০–এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে
ই-সিগারেট ব্যবহার করে ফুসফুসজনিত জটিলতা নিয়ে ভর্তি হন ২ হাজার ৮০৭ জন। এর মধ্যে ৬৮ জনের মৃত্যুর সঙ্গে ই-সিগারেটের যোগসূত্র ছিল। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *