খুশকি থেকে পরিত্রাণের উপায়

জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: খুশকি অতি পরিচিত চর্মরোগ, যা সাধারণত মাথার খুলির ত্বকে হয়। খুশকির সমস্যায় নারী-পুরুষ সমানভাবে ভোগেন। প্রত্যেক মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময় খুশকিতে আক্রান্ত হন। অনেকেই এই রোগকে হালকাভাবে নেন, এমনকি এটি যে একটি রোগ এবং এর যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। খুশকির প্রভাবে মাথায় প্রচণ্ড চুলকানি ছাড়াও চুল নিয়মিত পড়তে পারে। খুশকি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। ঠিক চিকিৎসায় অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।
খুশকির কারণ: মাথার খুলির ত্বকে একধরনের ফাঙ্গাস বা ইস্ট জীবাণুর সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণ বেশি হয়ে তেলগ্রন্থি (সেবাসিয়াস গ্রন্থি) থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হলে খুশকি হয়। অনেকে জেনেটিক সূত্রে খুশকির ঝুঁকিতে থাকেন।
খুশকির কারণে মাথায় চুলকানি ছাড়াও চুল নিয়মিত পড়তে পারে। এমতাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সাধারণ শ্যাম্পু কিংবা তেল ব্যবহার করতে বলা হয় কিংবা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয় না। এতে বিভিন্ন প্রকার সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল কিংবা ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর ভেতর সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং টিনিয়া ক্যাপাইটিস অন্যতম।
সাদা সাদা খুশকি যখন মাথা থেকে ঝরে ঘাড়ের কাপড়ে জমে, তখন প্রত্যেকেই একধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। দৈনন্দিন মেলামেশা, অফিস-আদালতে কাজকর্ম, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান, এমনকি প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করা, সব ক্ষেত্রেই এই বিব্রতকর খুশকি দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
কোথায় কোথায় হতে পারে খুশকি?
খুশকি শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। সাধারণত মাথার ত্বকে, মুখে, বুকে, চোখের পাপড়ি, নাকের দুই পাশে খুশকি হয়ে থাকে।
চোখের পাতা বা ভ্রুতে খুশকি: অনেক সময় দেখা যায়, চোখের পাতায় বা ভ্রুতে সাদা সাদা খুশকির মতো, যা খুশকিও হতে পারে আবার কোনো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও হতে পারে। তবে যাদের মাথায় খুশকি থাকে তাদের চোখের পাতা বা ভ্রুতে খুশকি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাথার খুশকি নিয়ন্ত্রণ করলেই সাধারণত ভালো হয়ে যায়। আর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে চোখ লাল, জ্বালাপোড়া, পানি ঝরা এমনকি চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজের প্রতি বেশি যত্নবান হলে এমন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলে। যেমন—হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে চোখ বন্ধ করে দিনে কয়েকবার ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে এবং দিনে কয়েকবার কিছুক্ষণ গরম সেক দিলে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
খুশকি প্রতিরোধে করণীয়:
শ্যাম্পু ব্যবহার: যাঁদের খুশকি বেশি হয়, তাঁরা প্রতিদিন চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার: বাইরে বের হলে ধুলোবালু রোধে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার খুশকি রোধে সহায়তা করে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: চুল খুশকিমুক্ত রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চুল অপরিষ্কার থাকলেই খুশকি বেশি হয়। অনেকেই ভেজা অবস্থায় চুল বেঁধে রাখেন। এটা ঠিক নয়। চুল ভালো করে মুছে নিতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিতে হবে।
চিকিৎসা: চুল পরিষ্কার রাখতে এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে শ্যাম্পু ব্যবহারে এখন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে খুশকি একটি রোগ, যা নির্দিষ্ট কিছু কারণে হয়ে থাকে। তাই রোগের চিকিৎসা করতে যেমন ওষুধের প্রয়োজন হয়, তেমনি খুশকি দূর করতেও যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। এটাও মনে রাখা দরকার, যদি খুশকির যথাযথ চিকিৎসা করানো না হয়, তবে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং এই জটিলতারও আবার অন্য ধরনের ওষুধের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।
কিটোকোনাজল শ্যাম্পু যেভাবে ব্যবহার করবেন: খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল শ্যাম্পু লাগিয়ে দুই থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুবার করে ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে। যাঁদের নিয়মিত খুশকি হয়, তাঁরা এক বা দুই সপ্তাহ খুশকি প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে তাঁরা দীর্ঘদিন খুশকিমুক্ত থাকতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *