মাকে বলেছিলেন বেতন পেলে বাড়িতে আসবেন; এলেন, তবে লাশ হয়ে বাড়িতে

জনতার কণ্ঠ স্টাফ রিপোর্টার: ‘শনিবার বেহানে ফোনে কতা কইছি হাবিবুল্লাহর লগে। হাবিব আমারে জিগায়, “মাগো! কী খাইছো, নাশতা করছোনি, কী করো!” আমি কইছি, হ বাবা, আমি নাশতা করছি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত কম্পিউটার অপারেটর মো. হাবিবুল্লাহর (২২) মা হোসনে আরা বেগম (৪৩)। কান্নার জন্য তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না।
সীতাকুণ্ডে আবার বিস্ফোরণের আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছে মানুষ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় আতঙ্কে ঘর ছেড়ে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন ও ডিপোতে কাজ করা শ্রমিক–কর্মচারীরা। বিএম ডিপোর পাশের কেশবপুর গ্রামে
হাবিবুল্লাহর বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা মো. শাহাবুদ্দিন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ছিলেন। চট্টগ্রামে চাকরি করতেন। হাবিবুল্লাহ ছোট থাকতেই তিনি মারা যান। এর পর থেকে ভোলায় নানার বাড়িতেই বড় হন। এসএসসি পাসের পর মামা আলমগীর ফরাজির সঙ্গে জীবিকার সন্ধানে চট্টগ্রামে যান। চাকরি পান সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতেও ডিপোতে রাতের শিফটে কাজ করছিলেন হাবিবুল্লাহ। সেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিনি। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
হাবিবুল্লাহর নানা মো. সিদ্দিকুর রহমান ফরাজি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর মা হোসনে আরা সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর হোসনে আরার আবার বিয়ে হয়। সেখানে হাবিবা (৫) নামের তাঁর এক কন্যাসন্তান আছে। সব সময় মা ও বোনের খোঁজখবর রাখতেন হাবিবুল্লাহ।
হোসনে আরা বলেন, শনিবার দুপুরে হাবিবুল্লাহর সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে কথা হয়। কথা বলার ফাঁকে মেয়ে হাবিবাকে পড়তে বলছিলেন। তখন হাবিবুল্লাহ তাঁকে বলেন, ‘মা, ওরে মাইররো না! ওরে আমি ডাক্তারি পড়ামু। ওরে লইয়া এটটু কষ্ট করো, তোমাগো ওরে লইয়া চিন্তা (টাকার) করোন লাগব না।’ কাঁদতে কাঁদতে মা হোসনে আরা বলেন, ‘ছেলে কইছে, মাগো, আমি বাড়িত আমু। বেতন পাইলে বাড়িত আমু। আমারে মালিক চাইর দিনের ছুটি দিছে। দুই দিন তো আইতে-যাইতে যাইবো, আর দুই দিন তোমগো লগে থাকমু।’
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা: পাঁচ-ছয়টি কনটেইনারে এখনো দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আকাশে উড়ছে বিষাক্ত রাসায়নিক ও পুড়ে যাওয়া কনটেইনার থেকে বের হওয়া ধোঁয়া। ছবি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তোলা ।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাবিবুল্লাহর লাশ ভোলায় তাঁর নানার বাড়িতে পৌঁছায়। আজ সোমবার সকাল নয়টার দিকে জানাজা শেষে লাশের দাফন সম্পন্ন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *