জনতার কণ্ঠ ডেস্ক: চুল প্রত্যেক মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুন্দর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল আমরা সবাই চাই। কিন্তু আমরা কি জানি দৈনন্দিন জীবনে অজান্তেই আমরা এমন কিছু কাজ করে ফেলি, যা আমাদের চুলের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে! তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন ১০টি অভ্যাস, যেগুলো চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো: : চুল আঁচড়ানো একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। কারণ এতে চুলের গোড়ার ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়। চুলের সঠিক বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। অনেকের মধ্যেই ঘন ঘন চুল আঁচড়ানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাথা আঁচড়ালে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানোর ফলে আগা ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে!
নিয়মিত শ্যাম্পু না করা: নিয়মিত শ্যাম্পু করা চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে এখনকার শহুরে লাইফস্টাইলে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ধোঁয়া, ঘাম, ধুলাবালুর সম্মুখীন হতে হয়। তাই নিয়মিত শ্যাম্পু না করলে স্ক্যাল্পে ময়লা জমে খুশকি, উকুন, চর্মরোগসহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা: নিয়মিত শ্যাম্পু না করা যেমন চুলের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলেও তা চুলের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। অনেকেরই রোজ রোজ শ্যাম্পু করার অভ্যাস আছে এবং চুলের যতটুকু প্রয়োজন তার অতিরিক্ত পরিমাণে শ্যাম্পু ব্যবহার করার অভ্যাসও আছে। বেশি শ্যাম্পু দিলে বা বেশি বেশি শ্যাম্পু করলেই চুল ভালো থাকবে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং অতিরিক্ত শ্যাম্পু করার কারণে চুলের ন্যাচারাল অয়েলস হারিয়ে যায়। ফলে চুল রুক্ষ দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের স্ক্যাল্প ড্রাই, তাদের জন্য ব্যাপারটা আরও ক্ষতিকর।
বেশি ব্লো ড্রাই করা: চুল বাতাসে শুকানোই সবচেয়ে ভালো। তবে আমাদের ব্যস্ততার জীবনে প্রায়ই তাড়াতাড়ি চুল শুকানোর জন্য ব্লো ড্রাই ব্যবহার করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। যেমন ড্রায়ারের তাপমাত্রা যতটা সম্ভব নিচে রাখতে হবে। ড্রায়ার চুল থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি দূরত্বে রেখে চুল শুকাতে হবে।
ভেজা চুল আঁচড়ানো ও হট আইরনিং: চুল যখন ভেজা থাকে, তখন চুলের গোড়া সবচেয়ে নরম থাকে। তাই তখন চুল আঁচড়ালে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভেজা চুলে যদি স্টাইলিংয়ের জন্য হট আইরনিং করা হয়। তাহলে তা চুলে বুদ্বুদ’ সৃষ্টি করতে পারে। চুল অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কুঁকড়ে যেতে পারে; ফলে চুল সহজেই ভেঙে পড়তে পারে। তাই হট আইরন বা অন্য যেকোনো প্রকারের স্টাইলিং টুল চুলে ব্যবহার করার আগে চুল শুকনা কি না, তা নিশ্চিত করে নেওয়া উচিত। এর তাপমাত্রা যতটুকু সম্ভব নিচে রাখা উচিত; এবং স্টাইলিং করার আগে অবশ্যই কোনো ‘তাপ সুরক্ষা’ স্প্রে ব্যবহার করে নেওয়া উচিত।
একই দিকে সিঁথি করা
দীর্ঘ সময় ধরে একই দিকে সিঁথি করে যেতে থাকলে, তা সেই দিকের চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চুল পড়তে আরম্ভ করে। ধীরে ধীরে সেই দিককার চুল পাতলা হতে শুরু করে। তাই নিয়মিত চুলের সিঁথি পরিবর্তন করা উচিত।
বিজ্ঞাপন
যেসব অভ্যাসে চুলের ক্ষতি মারাত্মক
চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার
অন্য অনেক কিছুর মতো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চুলের ফ্যাশনেরও দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। চুলে স্টাইলিংয়ের জন্য তারা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের হেয়ার কালার, হেয়ার ব্লিচ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। যেগুলো উচ্চমাত্রার রাসায়নিক বহন করে থাকে, যা চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকারক! এ ছাড়া তারা পার্মানেন্ট হেয়ার স্ট্রেন্থদেনিং ও স্মুথিং করায়।এসব হেয়ার ট্রিটমেন্টে যেসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল বহন করে। এগুলো একবারের জন্য চুলকে সুন্দর করে দেয় বটে। তবে চুলের স্বাভাবিকত্বকে ধ্বংস করে। এবং চুলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অনেক সমস্যা ডেকে আনে।
নিজে নিজে বিউটি এক্সপেরিমেন্ট করতে যাওয়া: ইউটিউব দেখে অনেকেরই বিউটি এক্সপার্ট হওয়ার শখ জেগে ওঠে। চুল কাটা থেকে শুরু করে, হেয়ার কালার, স্পা এমনকি কেউ কেউ নিজেই নিজের চুল পার্মানেন্ট সোজা বা কোঁকড়া করতে যায়। তবে এই ক্ষেত্রে নিজে নিজে এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে চুলের বারোটা যেন না বাজে। সত্যিকারের এক্সপার্টের শরাণাপন্ন হওয়াই ভালো!
সুইমিংপুলে ক্যাপ ছাড়া যাওয়া: সুইমিংপুলের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। ক্লোরিন চুলের জন্য ক্ষতিকর। চুলকে শুষ্ক বানিয়ে দেয়, যা অবশেষে আগা ফাটা ও চুল ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই পুলে নামার আগে অবশ্যই ক্যাপ ব্যবহার করা উচিত। আর তা না হলে, পুল থেকে উঠেই চুল শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
যেসব অভ্যাসে চুলের ক্ষতি মারাত্মক ।
নিয়মিত চুল না কাটা: অনেকেই চুল কাটার ব্যাপারে তেমন নিয়মিত না। আগা ফাটা চুল নিয়ে ঘুরতেও তাদের তেমন কিছু আসে যায় না। তবে ব্যাপার হলো, এই অভ্যাস চুলের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। আগা ফাটা চুল আঁচড়ালে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝরে পড়ে। তা ছাড়া যারা চুল লম্বা করতে ইচ্ছুক, তাদের নিয়মিত চুল কাটার প্রতি নজর দেওয়া উচিত।
রোদে অনেকক্ষণ খোলা মাথায় থাকা: রোদে অনেকক্ষণ ধরে খোলা মাথায় থাকলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাবে চুল শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এতে চুল অনেক ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং সহজে ঝরে পড়ে। তাই রোদে বের হওয়ার সময় টুপি, ক্যাপ, স্কার্ফ ইত্যাদি ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত।